পানামা পেপার্স কর ফাঁকির কেলেংকারিতে জড়িয়ে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর গুনলাউগসনকে অবশেষে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
অফশোর একাউন্ট খুলে তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন এমন খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল।
পানামার ল ফার্ম ‘মোসাক ফনসেকার’ ফাঁস হওয়া গোপন দলিলে দেখা গেছে মিস্টার গুনলাউগসন এবং তাঁর স্ত্রী ‘উইনট্রিস’ নামের একটি অফশোর কোম্পানির মালিক।
তিনি এবং তার পরিবার বহু মিলিয়ন ডলারের সম্পদ গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
তবে মিস্টার গুনলাউগসন কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কর ফাঁকির গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বের যে ক্ষমতাধর রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীরা এখন চাপের মুখে পড়েছেন, তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম যাকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়াতে হলো।
“পানামা পেপার্স” নামে পরিচিতি পাওয়া গোপন দলিলপত্রকে এযাবত কালের সবচেয়ে ব্যাপক গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাধর রাজনীতিক থেকে শুরু করে নামকরা সেলিব্রেটি- অনেকের কর ফাঁকির গোপন তথ্য বেরিয়ে এসেছে এসব দলিলপত্রে। পানামার একটি লিগ্যাল ফার্ম ‘মোসাক ফনসেকা’ থেকে এসব গোপন দলিল ফাঁস হয়ে যায়।
এ পর্যন্ত এই কর ফাঁকির কেলেংকারিতে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে আরও আছেন আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আত্মীয়-স্বজন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন, এবং বার্সেলোনার ফুটবল তারকা লায়নেল মেসি।
একটি জার্মান সংবাদপত্রের হাতে এসব দলিল আসার পর তারা ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট’ তা শেয়ার করে বিশ্বের প্রায় একশোটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তাদের এক বছরের অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে কর ফাঁকির এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির বর্তমান ও সাবেক আটজন প্রভাবশালী নেতাও কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠে। এদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। এ ঘটনার ব্যাপরে বেইজিং এখনো কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমর্থকরা এ ঘটনাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন ষড়যন্ত্র বলে বর্ণনা করেছেন।
ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যে সাংবাদিকরা এই গোপন দলিল নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে তাদের অনেকেই সিআইএ বা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রয়াত বাবাও একটি অফশোর কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন যেটি তিরিশ বছর ধরে ব্রিটেনে কোন কর দেয়নি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এই কোম্পানিতে মিস্টার ক্যামেরনের কোন শেয়ার নেই।
কিন্তু কর ফাঁকির এই প্রবণতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের ওপর চাপ বাড়ছে।
ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা লেবার পার্টির জেরেমি করবিন কর ফাঁকির এই প্রবণতার বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।